ই-লানিং প্লাটফর্ম
প্রশিক্ষণ কি এবং কেন প্রয়োজন?
প্রশিক্ষণ হচ্ছে একটি পরিকল্পিত কার্যক্রম। প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফলে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন করা হয়। প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন ব্যক্তির জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন সাধন করে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে তার যোগ্যতার উন্নতি ও সমৃদ্ধি সাধন করা।
প্রশিক্ষণের অন্যান্য নির্দেশনাঃ
প্রতিদিন কিছু হালকা শরীর চর্চার মাধ্যমে ক্লাস শুরু করলে ট্রেইনীদের জড়তা দূর করা সম্ভব হবে । প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে থেকে সপ্তাহ ভিত্তিক একজন করে দলনেতা নির্বাচন করা হবে। যিনি প্রথম দিনের পর থেকে শরীর চর্চা সেশন পরিচালনা করাবেন, প্রশিক্ষণার্থীদের সময়মত ক্লাসে আনা, নিয়মানুবর্তীতা ইত্যাদির দায়িত্বে থাকবেন। এতে করে তাদের মধ্যে নেতৃত্বসূলভ যোগ্যতার প্রতিফলন ঘটবে। এছাড়া পুরোদলটিকে চারটি ভাগে ভাগ করা হবে। এতে করে ব্যবহারিক ক্লাসগুলোতে শৃংখলা বজায় থাকবে এবং প্রশিক্ষণের উন্নতি
হবে প্রতিটি গ্রুপেও একজন করে দলনেতা নির্বাচিত হবেন।
অধিবেশনের শিরোনামঃ আত্ম বিশ্বাস বৃদ্ধি ও পেশাদারী মনোভাব তৈরী।
এই অধ্যায়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্পর্কে ধারণা দেয়া, আত্মমর্যাদা তৈরী করা এবং পেশাদারী মনোভাব গড়ে তোলা।
আত্ম বিশ্বাস কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণঃ
আত্ম উন্নয়ন ব্যক্তিত্ব বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। অধিক শিক্ষিত না হয়েও মনোবল বৃদ্ধির মাধ্যমে আত্ম উন্নয়ন সম্ভব। একজন অভিবাসী নারী শ্রমিকের জন্য যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিদেশে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে, পরিচিত জনদের থেকে দূরে থেকে কাজ করার সময় একমাত্র আত্মবিশ্বাস ও মনোবলই পারে নারী শ্রমিককে সহায়তা করতে।
ব্যক্তিত্ব কি?
ব্যক্তিত্ব বলতে গাম্ভীর্যতাকে বোঝায় না বরং এটি একটি কর্মদ্যোম আকর্ষণীয় চরিত্রের স্বরূপ। অনেকেই মনে করেন সুন্দর পোষাক-পরিচ্ছদ, খুব ভাব গম্ভীর রাশ ভারী থাকাই ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ। এধারণা আদৌ সঠিক নয়। এসব কিছু নির্ভর করে ব্যক্তির নিজস্ব কিছু ধ্যান ধারণার উপর। কথা বলার ধরণ মানানসই আচার আচরণ, সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কাজের প্রতি নিষ্ঠা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে আর্কষণীয় ব্যক্তিত্বের বিষয়টি। আবার বাহ্যিকভাবে বোঝায় তার মার্জিত ও রুচিশীল পোষাক পরিচ্ছদ, হাসিখুশি মনোভাব ও পরিবর্তীত পরিবেশে নিজেকে উপযোগী করে তোলার ক্ষমতা। ব্যক্তিত্বের উপাদান হচ্ছে মানোবল, বেশভূষা, আচরণ, অঙ্গভঙ্গী, বাচনভঙ্গী, শব্দচয়ন, জড়তামুক্তি, সুস্পষ্টভাবে এবং আস্তে আস্তে কথা বলা, ধৈর্যশীল ও সহানুভূতিশীল হওয়া।
ব্যক্তিত্ব ও আচরণ ভিন্ন হওয়ার পিছনে কারণঃ
- ব্যক্তির বিশ্বাস ও মূল্যবোধ
- সংস্কৃতিগত অবস্থান
- শিক্ষাগত অবস্থান
- সামাজিক অবস্থান
- ভৌগলিক ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপট
- প্রত্যাশা জনিত প্রেক্ষাপট
তবে সঠিক চর্চা ও অধ্যাবশায় এর মাধ্যমে এর দৃঢ় ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করা সম্ভব।
পেশাদারি মনোভাব অর্জনঃ
প্রত্যেক ব্যক্তিরই চেষ্টা থাকা উচিৎ তিনি যে পেশায় নিয়োজিত থাকবেন সেখানে সফলতা অর্জন করা। একজন অভিবাসী নারী যিনি গৃহ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত থাকবেন তাকে তার পেশায় সফল হবার জন্য কতগুলো বিষয়
খেয়াল থাকা উচিৎ। পেশাদারিত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মনে রাখা উচিৎ তা হলোঃ নিয়োগকর্তার কথা ও নির্দেশাবলী মনোযোগ দিয়ে শোনা, কোন বিষয় বা কাজ বুঝতে না পারলে পুনরায় জিজ্ঞেস করে নেয়া অথবা
সম্ভব হলে প্রথম বার হাতে কলমে দেখিয়ে দেয়ার অনুরোধ করা। আত্মকর্মী সম্পর্ক উন্নতি অভীবাসী নারীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অন্য কোন সাহায্যকারী থাকলে তার সাথে কাজ সুনির্দিষ্টভাবে কাজ ভাগ করে
নেয়া। নিজেকে জাহির করার প্রবনতা না থাকা। নিজেকে অবসাদগ্রস্ত (Dispressed) হতে না দেয়া এবং আবেগকে সংযত করা। নিজের সৃষ্টিশীল ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা।
অনেক সময় বাংলাদেশীদের মধ্য থেকেও কোন কোন ব্যক্তি নারীকর্মীকে ভাল বেতনের লোভ দেখিয়ে বা ভালবাসার প্রলোভন দেখিয়ে বের করে নিয়ে আসে এবং অর্থের বিনিময়ে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়। অতএব দূতাবাসের সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া কাজ বদলানো ঝুঁকিপূর্ণ।
সাধারণত নারী অভিবাসী কর্মীর বিদেশে যেসব সমস্যা হয় তা হলোঃ
- বাড়ির জন্য খারাপ লাগা
- কাজে মনোযোগ দিতে না পারা
- সন্তানের কথা মনে হয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হওয়া
- নতুন পরিবেশ ও খাদ্যাভাসের সাথে অভ্যস্ত না হওয়া
- ভাষা ও সংস্কৃতির ভিন্নতা
উপরোক্ত সমস্যার সম্ভাব্য ফলাফলঃ
- ফেরত আসতে চাওয়া
- কাজের মনোযোগ নষ্ট হওয়া
- কাজের ক্ষতি করা
- কাজে মনোযোগ না থাকলে একজন কর্মী সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন না
- চাকরি হারানো
- ফিরে আসলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হওয়া
কাজেই একজন নারী অভিবাসী কর্মীকে তার মনোকষ্ট দূর করতে সচেষ্ট হতে হবে। এক্ষেত্রে আগে থেকে যদি তিনি সচেতন থাকেন এবং ভেবে-চিন্তে পদক্ষেপ নেন তাহলে তিনি সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলা করতে পারবেন।
অন্যান্য দেশের নারী কর্মীরা (যেমন- শ্রীলংকা, ফিলিপিন, ইন্ডিয়া) দীর্ঘদিন ধরে এই পেশায় সুনামের সাথে কর্মরত আছেন। তারা তাদের কর্তব্য নিষ্ঠা, যোগ্যতা, সততা ও ব্যক্তিত্বের জন্য পেশাদারিত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এর ফলে তাদের পারিশ্রমিকও তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।